ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

 

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ রোগ। এটি বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণ বেশি দেখা যায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে তখনই আক্রান্ত হয় একজন ব্যক্তি যখন এডিস মশা একটি সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয় এবং তারপর ভাইরাস বহন করার সময় একটি সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয়।

দেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সংক্রমণটিকে মোটেই অবহেলা করা মত উচিত নয়, যার কারণ হচ্ছে, এটি গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে মৃত্যুর আশঙ্কা পড়তে হবে। এখানে ডেঙ্গু সংক্রমণের লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা উল্লেখ করা হলো।

পোস্ট এর সূচিপত্রঃ

১ । ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কী?
২। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী কী?
৩। ডেঙ্গু রোগের ধরন
৪। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা
৫। কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে
৬। ডেঙ্গু হলে করণীয়: ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায়োজন-
৭ । ডেঙ্গু রোগীর খাবার
৮। ভর্তি কার্যক্রমে মেধাক্রম প্রণয়ন পদ্ধতি
৯ । ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচরাচর প্রশ্ন
  ৯.১  কোন মশা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয়?
  ৯.২  এডিস মশা কীভাবে চিনবেন?
  ৯.৩  এডিস মশা কোথায় কামড়ায়?
  ৯.৪  ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?
১০। উপসংহার

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কী?'

এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন কিনা? প্রথমে এটি আমাদের জানতে হব। বিশেজ্ঞরা কিন্তু তেমনটা বলতেছেন না। তারা বলতেছেন কোনো ভাইরাস পরিবেশে উপস্থিতে  কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়,
তখন ওই মশা কামড়ালে মানুষকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে।
ভাইরাসের বাহক হিসেবে স্ত্রী এডিস মশা ভূমিকা পালন করে থাকে । যারা এডিস মশা দ্বারা সংক্রমিত  হয় তাদের দেহ থেকে সুস্থ মানুষের দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে ।

হালকা ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রচণ্ড জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার হয়ে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন আগে থাকে যারা সেই ব্যাক্তির যদি পরবর্তীতে এই রোগ আবার দেখা দে তাহলে প্রাণঘাতী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছ। 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী কী?

মশা বাহিত ভাইরাস ঘটিত রোগটির নাম হলো ডেঙ্গু জ্বর। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার কোনো ব্যক্তি যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে যদি ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই জন্যে আমাদের কে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলোর সম্পর্কে জ্ঞান ভালোভাবে থাকা উচিত। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১| উচ্চ জ্বর (40°C/104°F)পর্যন্ত হতে পারে,
২| মাথাব্যথা,
৩| বমি,
৪| চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি,
৫| চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ),
৬| শরীরে শীতলতা অনুভব করা,
৭| ক্ষুধা কমে যাওয়া,
৮| কোষ্ঠকাঠিন্য,
৯। মাথাঘোরা,
১০। স্বাদের পরিবর্তন,
১১। ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি,
১২। রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দনের হার কমে যাওয়া
১৩। পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা হওয়া।

ডেঙ্গু রোগের ধরন

বিশেজ্ঞরদের মতে, এডিস মশা কামড়ালে মানুষের সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে হেমোরেজিক এবং ক্ল্যাসিকাল। সাধারণত ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ক্ল্যাসিকালে জ্বর ভালো হয়ে যায়। হেমোরেজিক জ্বর বিপদ ঘটিয়ে থাকে। হেমোরেজিক জ্বর দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা ৫ থেকে ৭ দিন পর মারাত্মক সংকটাপন্ন হবার সম্ভবনা থাকে ।

হেমোরেজিক দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগীর রক্তপাত হয়, সেই আক্রান্ত রোগীর রক্ত প্লাজমা এবং অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম অনেক সময় দেখা দিতে পারে। এতে করে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় হেমোরেজিক দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির নাক , মুখ এবং দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত ঘটে। মাঝে মাঝে মলের সঙ্গেও রক্ত বের হতে পারে।

নারীরা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে পিরিয়ডের সময়ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।
অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়ে থাকে। যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে যখন ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীর হাত পা দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায় এবং রক্তচাপ কমে যায়।

ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি এ পরিস্থিতি তে মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করতে পারে। এতে করে ওই ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও আরম্ভ শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তি বমি বমি ভাব হয় বা কেউ কেউ বমি করে। এই সময়টায় এই সময়টায় কোনো কোনো রোগীর ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা, লিভারে সমস্যা, অথবা ব্রেনে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে। এতে করে তাদের মধ্যে কেউ শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুঃখজনক সাথে বলতে হয়, এর ফলে অনেক রোগীর মৃত্যুও হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা

যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে আমাদের কে তাহলে এডিস প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘরের আনাচে কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা পরিষ্কার করতে হবে এবং মশার স্প্রে বা ওষুধ দিতে হবে। সুরক্ষিত থাকার জন্যে দিনের বেলার যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পড়তে পারলে অনেক ভালো হবে।

অপরিষ্কার পানিতে সাধারণত এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। তার জন্যে ঘর,অফিস এবং আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো স্থানে পানি জমে থাকলে ২ থেকে ৩ দিন পর পর তা পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় এসি বা ফ্রিজের নিচের, ফুলের টবে মতো স্থানে পানি জমে থাকে, ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে আমাদের কে।

যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করতে হবে আমাদের কে তাহলে এডিস প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ঘরের আনাচে কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা পরিষ্কার করতে হবে এবং মশার স্প্রে বা ওষুধ দিতে হবে। সুরক্ষিত থাকার জন্যে দিনের বেলার যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পড়তে পারলে অনেক ভালো হবে।

অপরিষ্কার পানিতে সাধারণত এডিস মশা বংশ বিস্তার করে। তার জন্যে ঘর,অফিস এবং আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো স্থানে পানি জমে থাকলে ২ থেকে ৩ দিন পর পর তা পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় এসি বা ফ্রিজের নিচের, ফুলের টবে মতো স্থানে পানি জমে থাকে, ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখতে হবে আমাদের কে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে?

যাদের বয়স ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের উপরে তারা মূলত ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া যাদের ওজন বেশি, গর্ভবতী নারী, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয় কিংবা যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত, তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

এছাড়া ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে এ সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হলেই প্রথমে একজন ভালো অভিজ্ঞ এমবিবিএস চিকিৎসকরের পরামর্শ নিতে হবে। ঘরে বসেই ভিডিও কলে মাধ্যমে চিকিৎসকরের পরামর্শ নিতে পারেন অনলাইনে। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো সময় ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসক কে জানাতে পারেন আপনার সমস্যার কথা। প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকরের পরামর্শ অনুযায়ী চললে, জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে। সাধারণত জ্বরের শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএস১ (NS1) টেস্ট করার কথা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারেরা । এর সঙ্গে আরো থাকে SGOT, SGPT টেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এই সবগুলো টেস্টই আপনি অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে বা হসপিটালে গিয়ে করতে পারেন। আপনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্টও পেয়ে যাবেন।

ডেঙ্গু হলে করণীয়: ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায়োজন-

যেকোনো রোগে বা রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকরের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকরের নির্দেশনা ছাড়া ঔষধ গ্রহণ করলে অথবা নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা শুরু করা অনেক ভালো। ডেঙ্গু জ্বরের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। জেনে নিন ডেঙ্গুর প্রতিকারে যা যা করা প্রয়োজন-


১| জ্বর কমানোর জন্য গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছতে পারেন অথবা গোসল করাটাও এক্ষেত্রে কার্যকরী।
২| জ্বরের মাত্রার উপর নির্ভর করে ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর পর এই ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
৩| ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি দিনে ৪টি ঔষধ নিতে পারবেন। এর বেশি নিলে লিভারের সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে।
৪| ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে জ্বর কমাতে গিয়ে ব্যথানাশক অথবা অ্যাসপিরিন এনএসএআইডি গ্রুপের ঔষধ ব্যবহার না করার প্রতি কড়াভাবে নিষেধ করেন ডাক্তাররা।
৫| জ্বর কমানোর জন্য আক্রান্ত বাক্তিকে প্যারাসিটামল বা এ জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
৬| অধিকাংশ সময়ই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা  ক্লান্ত হয়ে পড়েন , আক্রান্ত বাক্তিকে  পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অনেক জরুরি।
৭| লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কোনো ভারী কাজ অথবা মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। তবে তাই বলে শুধু শুয়ে-বসে থাকাটাও ঠিক নয়। স্বাভাবিক হাঁটাচলা বা দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
৮| এ সময় বাসার বাইরে বের না হওয়াই অনেক ভালো হবে ।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার

এ সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে  প্রচুর আয়রন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন, স্যুপ, পানি, ফলের রস, ডাবের পানি, এবং দুধ জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে বেশি বেশি করে ।

ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠার সময় প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। এ সময় শরীর যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে, সেজন্য ২ থেকে ৩ লিটার পানি প্রতিদিন পান করতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তিকে পানির পাশাপাশি স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, দুধ এবং ফলের রস জাতীয় তরল পানীয় প্রচুর পরিমাণে পান করা উচিত।

এছাড়া খেতে হবে প্রচুর আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। মুরগির মাংস, মাছ,  চর্বিহীন লাল মাংস,  দুধ ডিম ও দুগ্ধজাত খাদ্যে প্রোটিন বেশি পরিমান থাকে বলে এ সময় এসব খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, এ খাবারগুলো অনেক উপকরি।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে সচেতনতা। এডিস মশা যেন কোথাও বংশবৃদ্ধি করতে না পারে, কিংবা দিনেরবেলা যেন মশার কামড় এড়ানো যায়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব আমাদের ।

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সচরাচর প্রশ্ন

কোন মশা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয়?

এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু রোগ হয়। এই মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। এসি বা ফ্রিজের নিচের, ফুলের টবের মতো স্থানে জমা পানি থেকে এই ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হয়ে থাকে ।

এডিস মশা কীভাবে চিনবেন?

একটু লক্ষ্য করলেই আমরা যে কেউ ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশাকে খালি চোখেই চিনতে পারবো। মাঝারি আকারের সাদা-কালো ডোরাকাটা এই মশার শুঁড় থাকে লোমযুক্ত। এডিস মশাদের মাথার পেছনের উপরের দিকেও ১টি সাদা দাগ থাকে, এটা দেখে সাধারণ মশা থেকে খুব সহজেই  এডিস মশা কে অতি সহজে আলাদা করা যায়।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশার বিস্তার ঘটে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বলে এ সময়টাতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এডিস মশা যে শুধু দিনেরবেলাতেই কামড়ায়, এটাও কম বেশি এখন সবাই জানতে পেরেছে। তবে দিন বলতে শুধু সকালবেলা নয়; সকাল-থেকে সন্ধ্যা, সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়কেই এডিস মশার কামড়ের সময় বোঝানো হয়েছে।আরেকটু নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সাধারণত সকালের প্রথম দিকে এবং সন্ধ্যার ঠিক কিছুটা আগে এডিস মশা তৎপরতা থাকে।

চিকিৎসকদের মতামত অনুযায়ী, রাতের অন্ধকারে এরা কামড়ায় না। অনেকেরই দুপুরে খাবারের পর হালকা ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে। এ সময় ঘুমানোর সময়ও সতর্ক থাকা উচিত আমাদের কে। বিশেষত, শিশুদের ব্যাপারে একদমই অবহেলা করা মোটেও উচিত হবে না।

এডিস মশা কোথায় কামড়ায়?

অনেকেই আবার মনে করেন, এডিস মশা বোধহয় শুধু পায়েই কামড়ায়। এটাও এক প্রকার ভুল ধারণা।শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় পায়ের অংশ উন্মুক্ত থাকে বলে, ওই জায়গাকেই এরা কামড়ানোর জন্য বেছে নেয়। তবে সুযোগ পেলে, এই ভয়ংকর এডিস মশা শরীরের যেকোনো অংশতেই কামড়ে দিতে পারে।  এই মৌসুমে কোনো জ্বরকেই তাই সাধারণ জ্বর হিসেবে এড়িয়ে যাওয়া হবে বোকামির কাজ!

মশা কামড়ানোর কতদিন পর ডেঙ্গু হয়?

এডিস মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হয়?

এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হয় না। পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?

ডেঙ্গু ছোঁয়াচে নয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এক বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে অথবা স্পর্শ করলে,অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা নেই। ফলে, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসায় কোনো ভয় নেই, কিংবা তাকে আলাদা রাখার কোনো প্রয়োজনও নেই।

উপসংহার

ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু অবহেলা করলে এই রোগ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এ রোগের শহরাঞ্চলে প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। তাই নগরবাসীকে অনেকটাই সজাগ ও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যে ব্যক্তির ডেঙ্গু হয়েছে তাদের কে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয় ডেঙ্গু সংক্রমণ মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। সুস্থ থাকুন, সচেতন থাকুন এবং ভালো থাকুন। প্রয়োজনে আপনারা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Post a Comment

Previous Post Next Post
This Template Designed By e10Script