তাড়ানোর আধুনিক উপায় কি ও মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় |
পৃথিবীতে মশার কামড়ে বিরক্ত হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মশার কামড় থেকে মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভিবিন্ন ধরণের রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার ।
মশা তাড়ানোর ক্রিম মশা প্রতিরোধক হিসেবে বেশ পরিচিত। অল্প পরিমান হাতে-পায়ে লাগিয়ে নিলে মশা থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া সম্ভব। লিপজেলের স্টিকের মতো দেখতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্যাব্রিক রোল অন ও কাজে দেয়।
বযস্ক রা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বুঝলেও ছোটদের কে বোঝাবে? এ নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই! কোনোভাবেই তাদের যেন মশা না কামড়ায়, আজকাল সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হচ্ছে অভিভাবকদের । অনেকেই নানা উপায় অবলম্বন করছেন মশার থেকে বাঁচতে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে ব্যবহার করতে পারেন ডিজিটাল যুগের আধুনিক কিছু জিনিস।
পোস্ট এর সূচিপত্রঃ
১ । ডিজিটাল যুগের আধুনিক কিছু জিনিস
১ .১ | মশা প্রতিরোধক স্টিকার
১ .২ | ফ্যাব্রিক রোল-অন
১ .৩ | ক্রিম
১ .৪| মশা প্রতিরোধক স্প্রে
১ .৫ | মশা মারার বৈদ্যুতিক যন্ত্র
২। মশা তাড়ানো প্রাকৃতিক পদ্ধতি
২ .১ | লেবু আর লবঙ্গ
২ .২ | তুলসী গাছ
২ .৩ | পুদিনার ব্যবহার
২.৪| নিমের তেল
২ .৫ | কর্পূর
২ .৬ | চা পাতা
২ .৭ | রঙিন কাপড় পরবেন না
২ .৮ | সুগন্ধি ব্যবহার
ডিজিটাল যুগের আধুনিক কিছু জিনিস
মশা প্রতিরোধক স্টিকার
সিট্রোনেলা তেল বাচ্চাদের খেলনা স্টিকারের মতো দেখতে রঙিন এই মশা প্রতিরোধকে রয়েছে ; যার ভূমিকা হচ্ছে কীটপতঙ্গ দূরে রাখা। রাসায়নিক উপাদানমুক্ত, উদ্ভিদভিত্তিক এই তেলের গন্ধ মশা তাড়াতে বেশ কার্যকর বলে জানিয়েছেন ভিবিন্ন গবেষণাবিদরা । মশা থেকে দূরে রাখতে শিশুদের পোশাকের সামনে পেছনে মশা প্রতিরোধক স্টিকার লাগিয়ে লাগাতে হবে। এটি প্রায় শিশুদের ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মশা থেকে সুরক্ষা দেবে। দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকার স্টিকারের প্রতি পাতার।।
ফ্যাব্রিক রোল-অন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফ্যাব্রিক রোল অন পাওয়া যায় লিপজেলের স্টিকের মতো দেখতে। ইউক্যালিপটাস ও সিট্রোনেলা তেল দিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয় এটি। শিশু থেকে বড় যে কারও পোশাকের ওপর ঘষে লাগিয়ে নিলে মশা অনেকটাই দূরে থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে আমাদেরকে, এটি ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। পোশাকের ওপরই শুধু ফ্যাব্রিক রোল অন ব্যবহার করতে হবে। এটি প্রায় ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত মশা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এটি দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকা প্রায় ।
ক্রিম
মশা তাড়ানোর ক্রিম মশা প্রতিরোধক হিসেবে বেশ পরিচিত । অল্প পরিমান পায়ে হাতে লাগিয়ে নিলে মশা থেকে অনেকটাই সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। এটি তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় অ্যালোভেরা, সিট্রোনেলা তেল ও বাদামের তেল।এই ক্রিমটি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটিকে সাধারণ ক্রিমের মতো ব্যবহার করা যায়। ত্বকে লাগিয়ে নেওয়ার পর ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটির কার্যকর থাকে। ২ মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে যে কেউ এই ক্রিম ব্যবহার করতে পারবেন। বারডেম হাসপাতালের মা ও শিশু বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ডা. ফাহমিদা রহমান বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় শিশুদের হাত পা কিংবা পোশাকে অল্প করে এই ক্রিম লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে এ জাতীয় কোনো কিছু মুখের ত্বকে লাগানো যাবে না। অ্যালার্জির সমস্যা হবে কি না, সেটা বুঝতে হাতের ত্বকে অল্প একটু জায়গায় লাগিয়ে নিতে পারেন। র্যাশ দেখা দিলে এই ক্রিম ব্যবহার করা যাবে না।’ এটির দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
মশা প্রতিরোধক স্প্রে
বাজারে রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক এই দুই ধরনের মশার স্প্রে পাওয়া যায়। এটি উন্মুক্ত ত্বকে এবং কাপড়ের ওপর ব্যবহার করা যায়। তবে কাপড়ের নিচে দিকে কিংবা ঢেকে রাখা ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, স্প্রে ব্যবহার করার সময় চোখে যেন না যায়। অ্যালার্জির সমস্যা বুঝতে আগে অল্প করে হাতে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখুন সমস্যা হচ্ছে কি না সেটি দেখতে পারেন । একবার স্প্রে করা হলে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটি মশা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এটির দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা মাত্র।
মশা মারার বৈদ্যুতিক যন্ত্র
শুধু মশাই নয়, মাছিসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচাবে বৈদ্যুতিক ল্যাম্প। উপকারী সঙ্গী হতে পারে ব্যাটও । দুটির কাজ করার পদ্ধতি প্রায় একই ধরণের। ঘরের এককোণে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রেখে দিলেই সেটি মশা মারার কাজ করে। ব্যাট হাতে নিয়ে নিজের কিছুটা কষ্ট করতে হয়।
সুইচ অন অবস্থায় মশা মাছি এগুলোর ভেতরে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। সচেতন থাকতে হবে, শিশুরা যেন কোনোভাবেই এগুলোতে হাত না দেয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে না চাইলে বড়দেরও সাবধান থাকা প্রয়োজন। বৈদ্যুতিক বাতি পেয়ে যাবেন ৫৫০ থেকে ১ হাজার টাকা ও ব্যাটের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার এর মধ্যে।
মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় |
অনেক সময় দেখা যায় স্প্রে, মশারি ওকয়েল ব্যবহার করেও মশা তাড়ানো যায় না।
তবে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি কিন্তু আছে, যেগুলো কাজে লাগালে মশা থেকে অনেকটাই সুরক্ষা পাওয়া যাবে। চলুন জেনে নিই সেগুলো।
মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়
লেবু আর লবঙ্গ
একটি লেবু নিয়ে তা মাঝখানে খণ্ড করে কেটে ভেতরের অংশে অনেকগুলো লবঙ্গ পুরোটা গেঁথে দিতে হবে। শুধু লবঙ্গের মাথার দিকের অংশ বাইরে থাকবে। এরপর ঘরের কোণায় লেবুর টুকরাগুলো একটি প্লেটে করে রেখে দিতে হবে। এছাড়া ঘরের জানালার গ্রিলেও রেখে দিতে পারেন এতে করে মশা অনেকটাই কমে যাবে। কিছুদিন পর পর লেবু গুলো বদলে দিতে হবে, আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
তুলসী গাছ
তুলসী গাছ ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। শুধু রোগজীবাণুই নয়, মশাকেও দূরে রাখতে সাহায্য করে তুলসী গাছ। আপনার বাড়ির টবে কয়েকটি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখতে পারেন। তাতে মশা কমবে।
পুদিনার ব্যবহার
জার্নাল অফ বায়োরিসোর্স টেকনোলোজির গবেষণা মতে, তুলসি গাছের মতো পুদিনা পাতাও মশাকে দূরে রাখতে অনেক সাহায্য করে থাকে। পুদিনার গন্ধ শুধু মশাই নয় অনেক ধরনের ক্ষতিকর পোকামাকড়কে ঘর থেকে দূরে রাখে। খাবার টেবিলে গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন । ৩ দিন পরপর পানি বদলে দিতে হবে। তাছাড়া, পুদিনা পাতা গুলো ছেঁচে পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানির তাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিতে পারেন এতে করে দেখবেন ঘরের সব মশা পালিয়ে যাবে । চাইলে আপনি পুদিনার তেলও শরীরে মাখতে পারেন ।
নিমের তেল
নিম গাছের ঔষধি গুণাগুণের কথা তো সবাই জানেন। নিমের তেল ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া এই তেলের রয়েছে মশা তাড়ানোর বিশেষ গুণ। এই শীতে মশার কামড় থেকে বাঁচতে নারিকেল তেল ও নিমের তেল সমপরিমাণ মিশিয়ে হাত পায়ের চামড়ায় লাগিয়ে রাখতে পারবেন। এটি মশাকে আপনার থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
কর্পূর
মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কর্পূর হতে পারে কার্যকর সমাধান। কর্পূরের গন্ধ মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। যে কোনো মুদি দোকান বা ওষুধের দোকান থেকে কর্পূরের ট্যাবলেট কিংবা গুঁড়া এনে পানি দিয়ে পূর্ণ ছোট পাত্রতে রেখে দিন। এরপর পাত্রটি ঘরের এক কোণে রেখে দিন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন মশা কমতে শুরু করেছে। ২-৩ দিন পর পর পাত্রের পানি বদলে নতুন পানি দিতে হবে। পাত্রে রাখা আগের পানি ফেলে না দিয়ে এটি আপনারা ঘর মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে পিঁপড়ার উপদ্রবও কমতে সাহায্য করবে।
চা পাতা
চা পাতা পুরুরিয়ে মশা তাড়ানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি । কমবেশি সবার ঘরেই চা পাতা থাকে। আপনার ব্যবহৃত চা পাতা ফেলে না দিয়ে তা ভাল করে রোদে শুকিয়ে রাখে দিন। শুকনো চা পাতা পোড়ানোর ধোঁয়ায় ঘরের মশা মাছি পালিয়ে যাবে।
রঙিন কাপড় পরবেন না
কিছু প্রজাতির মশা আছে যারা রঙিন কাপড় প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হয়ে থাকে যেমন লাল, কালো, নীল এসব রঙের । তাই মশার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের পছন্দের রঙের পোশাক পড়া থেকে এড়িয়ে চলতে হবে।
সুগন্ধি ব্যবহার
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে পারফিউম , আতর কিংবা লোশন মাখলে মশা আপনার কাছে কম যাবে। কারণ মশারা সুগন্ধি পছন্দ করে না।
Read More: ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা, ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে